বিগত নতুন বছরের প্রথম দিনে যে বার্তা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র

বিগত নতুন বছরের প্রথম দিনে যে বার্তা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত রায়ের সমালোচনা; নির্বাচন পরবর্তী অ্যাকশন আগেই প্রকাশ করছেনা যুক্তরাষ্ট্র
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আদালতের দেওয়া কারাদণ্ডের কড়া সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এছাড়া আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে সতর্ক আভাস দিয়ে দেশটি জানিয়েছে, নির্বাচন পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকশন কী হবে, তা আগেই বলা হবেনা। কেননা বাংলাদেশে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দীর্ঘদিন থেকে তাগাদা দিয়ে আসছিলো যুক্তরাষ্ট্র।

বুধবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারাদণ্ড এবং একতরফা ‘ডামি নির্বাচন’ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী হবে তা জানতে চাইলে এভাবেই দেশটির অবস্থান স্পষ্ট করেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
ড. ইউনূসের কারাদন্ড ছাড়াও আদালতকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত
মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধীদলের অসংখ্য নেতাকর্মী, ভিন্নমত, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের ওপর সরকারের অব্যাহত নিপীড়নের বিষয়টিও উঠে আসে ব্রিফিংয়ের প্রশ্নোত্তর পর্বে।

ব্রিফিংয়ে বিচারের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিতের আহবান জানিয়ে সরকারকে উদ্দেশ্য করে বাইডেন প্রশাসনের এই কর্মকর্তা বলেন, যাকিছুই ঘটবে তাতে কড়া দৃষ্টি থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের।
ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট করেসপন্ডেন্ট মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, "শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম প্রাপ্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে নববর্ষের প্রথম দিনে বাংলাদেশের শ্রম আদালত যে কারাদণ্ড দিয়েছে সে বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাচ্ছি।নিয়ন্ত্রিত আদালতে রায়ে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচ্ছন্ন নির্দেশনার অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশে আইনের শাসন এবং বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা-- এই দুই ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে তা কোন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে সেটা কী স্টেট ডিপার্টমেন্ট অনুধাবন করতে পেরেছে? বিশেষ করে যে মামলায় বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের জেল দেওয়া হয়েছে এবং অসংখ্য বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী, গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার কর্মীরা যেভাবে একই ধরনের দুরভিসন্ধিমূলক মামলায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, ক্ষেত্র বিশেষ অনেকের ক্ষেত্রে সেই নির্যাতনের মাত্রাটা আরও বেশী, সেসব নির্যাতনমূলক

মামলাগুলোকে স্টেট ডিপার্টমেন্ট কীভাবে মূল্যায়ন করবে?"
জবাবে মিলার বলেন, "বিশ্ব জুড়ে দারিদ্র বিমোচনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তার এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারসহ মর্যাদাপূর্ণ অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে যে মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সে মামলাটি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।"
তিনি আরও বলেন, "এই মামলার রায় নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে নিন্দার ঝড় উঠেছে স্পষ্টতই সেটি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে আহবান জানাই, তারা যেনো সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে। এর বাইরে যাকিছুই ঘটবে তাতে কড়া দৃষ্টি থাকবে আমাদের।"
আসন্ন একতরফা নির্বাচন প্রসঙ্গে করা অপর এক প্রশ্নে এই প্রতিবেদক জানতে চান, "এ সপ্তাহের শেষেই বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে নিজ দল থেকে ডামি প্রার্থী দাঁড় করাতে প্রকাশ্য নির্দেশনা দিয়েছেন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের যে গঠনমূলক পরামর্শ দিয়েছিলো তাতে কর্ণপাতই করেননি শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র কী এই ধরনের একটি ডামি নির্বাচনকে বৈধতা দিবে? যদি তা না হয় তাহলে এই ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বাইডেন প্রশাসন? গত সপ্তাহে বিবিসি তাদের এক রিপোর্টের শিরোনামে লিখেছে- এক মহিলার প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন।"
জবাবে মুখপাত্র মিলার বলেন, "আমার মনে হয় এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর এর আগে আমি দিয়েছি। তবে নতুন বছর শুরু হওয়ার কারণে আমি আবারও এর উত্তর দেবো। আমরা বাংলাদেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছি। এবিষয়টি অনেকবার স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাতে আমাদের স্পস্টত নজর রয়েছে "
নির্বাচনের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের অ্যাকশন নিবে তা নিয়ে এখনই জানাতে চাননা বলে উল্লেখ করেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান এই মুখপাত্র।
প্রসঙ্গত, ছুটির মওসুমের কারণে প্রায় ২ সপ্তাহ পর বুধবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হলে প্রশ্নের জন্য এই প্রতিবেদককে আহ্বান করেন ম্যাথিউ মিলার।
এমআর/