সংসদের পরপরই উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি

সংসদের পরপরই উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি
প্রতীকী ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি দেশের প্রায় ৫০০ উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজও শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংসদের পরপরই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। গতবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক মাস পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তার আগেরবার তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর।

এবারও এর কাছাকাছি সময় বেছে নিতে পারে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ধারণা, সংসদ নির্বাচনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিলে কমিশন ২০১৪ সালের মতোই দ্রুত উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ বিষয়ে স্বাধীন বাংলাকে বলেন, সংসদের সঙ্গে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মালপত্রও কেনা হচ্ছে। কারণ সংসদ নির্বাচনের পরপরই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পরই ওই বছরের ১৯ জানুয়ারি আগের নির্বাচন কমিশন উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মোট ছয়টি ধাপে ওই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় এক মাস পর ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন হয় পাঁচ ধাপে ওই বছরের ১০ মার্চ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত।

উপজেলা পরিষদ আইন অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। সেই হিসাবে উপজেলা নির্বাচনের সময় শুরু হবে চলতি বছরের নভেম্বরের শুরু থেকেই।

সম্ভাব্য প্রার্থীরা যা বলছেন
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন। ক্ষমতাসীন দলের অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাচনের আগে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথাও ভাবছেন। গাইবান্ধা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ সারোয়ার কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না।সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার কথা ভাবছি।’

উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যানদের মধ্যে একই ভাবনার কথা জানান ঠাকুরগাঁও সদরের অরুনাংশু দত্ত টিটো, বালিয়াডাঙ্গীর আলী আসলাম জুয়েল, রানীশংকৈলের শাহরিয়ার আজম মুন্না, দিনাজপুরের বীরগঞ্জের মো. আমিনুল ইসলাম, কাহারোলের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক সরকার, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর মোস্তাফা জামান ও রংপুরের মিঠাপুকুরের মো. জাকির হোসেন সরকার। আবার চেয়ারম্যানদের একাংশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। রংপুরের সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসিমা জামান ববি ও একই জেলার বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফজলে রাব্বি সুইট জানান, দলীয় মনোনয়ন পেলে নৌকা প্রতীক নিয়ে আবারও পরিষদের চেয়ারম্যান পদে লড়বেন।

নীলফামারী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ এ বিষয়ে স্বাধীন বাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে সবার আগে গুরুত্ব দিচ্ছি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে। এরপর গুরুত্ব পাবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। উপজেলা নির্বাচনে দলের সমর্থন চাইব। সে জন্য পরিষদের দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর কাজ অব্যাহত রেখেছি।’

একই জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম বারী পাইলট গতবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বলেন, ‘এবারও দলের মনোনয়ন চাইব। জনসমর্থন বাড়াতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে যাচ্ছি, এলাকার মানুষের খোঁজখবর নিচ্ছি, বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছি।’দলীয় মনোনয়ন দেওয়া যাবে তিন পদেই

নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, গতবারের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান—এ তিনটি পদেই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সে কারণে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে উপজেলা পরিষদের প্রার্থী মনোনয়নের কাজও করতে হবে।

গতবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ শুধু চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়। ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদটি দলের আগ্রহী সব প্রার্থীর জন্য উন্মুক্ত রাখে।

আগের কয়েকটি নির্বাচন
গতবার উপজেলা পরিষদের পঞ্চম সাধারণ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক ব্যবহার হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী কয়েকটি দল ছাড়া অন্য দলগুলো অংশ নেয়নি। ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয় মূলত নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে। প্রথম ধাপে ভোটগ্রহণ হয় ২০১৯ সালের ১০ মার্চ। এই ধাপে রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার সব উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়। এ ছাড়া দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ২৪ মার্চ, চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ এবং পঞ্চম ধাপে ১৮ জুন ভোটগ্রহণ হয়।

নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ৪৬৩টি উপজেলার মধ্যে ৩১৫টিতে জয়লাভ করেন। এর মধ্যে ১০৯টি জয়লাভ করেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হন ১৪৪টি উপজেলায়। তাঁরা ছিলেন বেশির ভাগই আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থী। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীরা তিনটি উপজেলায় এবং জাতীয় পার্টি-জেপির প্রার্থী একটি উপজেলায় জয়লাভ করেন।

তার আগে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হলেও ৪৫৮ উপজেলায় আওয়ামী লীগের ২২৩ জন (বিদ্রোহীসহ) প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অন্যদিকে এ পদে বিএনপির ১৫৮ জন (বিদ্রোহীসহ) এবং জামায়াতের ৩৬ জন নির্বাচিত হন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি (জাপা) সমর্থিত তিনজন ও অন্যান্য দল সমর্থিত ৩৮ জন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন।

ইসি সচিবালয়ের তথ্য অনুসারে গতবার ভোট পড়ার হারও ছিল কম। পাঁচটি ধাপে গড়ে ৪০.২২ শতাংশ ভোট পড়ে। তার আগে ২০১৪ সালে উপজেলার চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনে গড়ে ৬২.৩৭ শতাংশ ভোটার ভোট দেন। ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি এক দিনে অনুষ্ঠিত উপজেলার তৃতীয় সাধারণ নির্বাচনে ৪৭৫টি উপজেলায় ভোট প্রদানের এ হার ছিল গড়ে ৬৮.৩২ শতাংশ।

(প্রতিবেদনটিতে স্বাধীন বাংলাকে স্থানীয় নিজস্ব প্রতিনিধিরা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন)